সবসময় ডেস্ক :: সন্ধ্যায় অনুশীলন শুরুর আগে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের ২২ গজি উইকেটটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন রোহিত শর্মা। হাতের তালুর মতো চেনা উইকেটটা ঠিকঠাক আছে কি না তা পরখেরই চেষ্টা ভারত অধিনায়কের। কিন্তু কেন? নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আজ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ব্যাট-বলে রোহিতদের লড়াইটা যে ওই ২২ গজেই হবে, তাই এর গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে ঠিকঠাক ধারণা না থাকলে কি চলবে?
নিজ আঙিনায় বিশ্বকাপ, শতকোটিরও অধিক ভারতবাসীর প্রত্যাশা-২০১১ সালের মতো এবারও শিরোপাটা ঘরেই থাকবে। সেই প্রত্যাশার চাপ তো আছেই, প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডও যে রোহিতদের বড় অস্বস্তির কারণ। ক্রিকেটের বৈশ্বিক আসরে কিউইরা চিরকালের আন্ডারডগ, পক্ষান্তরে ভারত ফেবারিট। কিন্তু সর্বদা ফেবারিটের ভাগ্যেই জয় লেখা থাকে না। যেমনটা ছিল না ২০০০ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং ২০২১ সালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে, ২০১৯ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালেও। প্রতিবারই ভারতকে কাঁদিয়েছে নিউজিল্যান্ড, এবারও যে তেমন কিছু হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কোথায়?
অনিশ্চয়তা আছে বলেই ক্রিকেট রোমাঞ্চকর। সেই রোমাঞ্চটাই এখন দুশ্চিন্তা আর ভয়ের চাদরে ঢেকে রেখেছে পুরো ভারতকে। ওয়াংখেড়েতে আজ আবার অতীতের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না তো, এমন ভয় এখন রোহিতদের তাড়া করতেই পারে। নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক রস টেলর তো বলেই দিয়েছেন-নকআউট পর্বে কিউইরাই একমাত্র দল যাদের মোকাবিলা করতে চায় না ভারত। তার মতে, ‘যখন কিছু হারানোর থাকে না নিউজিল্যান্ডের, তখনই তারা বেশি বিপজ্জনক। এটা অবশ্যই জানার কথা ভারতের, তাই এই ম্যাচে তারাই চাপে থাকবে।’
ইংল্যান্ডের মাটিতে ২০১৯ বিশ্বকাপেও রাউন্ড রবিন লিগে ভারত ছিল দুর্দান্ত। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকেই তারা নাম লেখায় সেমিফাইনালে। কিন্তু সবশেষ দল হিসেবে ওই আসরের সেমিতে নাম লেখানো নিউজিল্যান্ড নির্দয়ভাবে ভেঙে দেয় তাদের স্বপ্ন। আরেকটি সেমিফাইনালের আগে হতাশার সেই অতীত যখন সামনে হাজির, রোহিত তখন বলে দিলেন, ‘অতীতে কি হয়েছে তা আমরা সবাই জানি, সেটা মাথায়ও থাকে। তবে অতীতে যা ঘটেছে, তা কেবলই অতীত। আপনি আজ কী করলেন, আগামীকাল কী করতে পারবেন, আমরা সাধারণত সেসব নিয়েই কথা বলি। সুতরাং মনে হয় না দশ কিংবা পাঁচ বছর আগে অথবা গত বিশ্বকাপে কী হয়েছে, সেসব নিয়ে খুব বেশি আলোচনা বা বিতর্কের দরকার আছে।’
চলতি আসরে লিগপর্বেও তো নিউজিল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত। সেটা নিয়ে অবশ্য তেমন কথা নেই। ঘুরে-ফিরে আলোচনায় বিগ ম্যাচের ব্যর্থতা। কিন্তু রোহিতের বার্তাটা পরিষ্কার, অতীত নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে তারা চোখ রাখছেন বর্তমানে। যে করেই হোক আজ নিউজিল্যান্ডকে হারাতে চান ভারতীয় অধিনায়ক। স্বাগতিক শিবিরের এমন মরিয়া অবস্থার কথা আঁচ করতে পারছে নিউজিল্যান্ডও। একমাত্র দল হিসেবে এই বিশ্বকাপে অপরাজিত থাকা ভারতকে ফেবারিটও মানছে তারা। কিন্তু কিউই অধিনায়কের সাফ কথা, দিনটা যদি তাদের হয়, কোনো বাধাই টিকবে না তাদের সামনে, ‘নিজেদের দিনে আমরা যে কাউকে হারাতে পারি। আমরা যদি সেরা ক্রিকেটটা খেলতে পারি, তা হলে অবশ্যই বড় সুযোগ থাকবে। হ্যাঁ, এটা মানছি যে তাদের হারানো খুবই কঠিন। মনে হচ্ছে কঠিন চ্যালেঞ্জই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। কিন্তু ফাইনালে ওঠার সময় এসে গেছে, আবার একটা দিন, আবার একটি নতুন শুরু। দিনটা যার হবে সেই ফাইনালে যাবে।’
ওয়াংখেড়েতে আজকের দিনটা যদি নিউজিল্যান্ডের হয়, তা হলে অতীতের পুনরাবৃত্তি নিশ্চিত। তা যদি না হয়, প্রতিশোধ তোলার আনন্দ নিয়ে ভারত পৌঁছে যাবে ফাইনালে। ২০১১ সালে যে মাঠে ফাইনাল জিতে ২৮ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়েছিল তারা, সেই ওয়াংখেড়েই আরেকটি মহাকাব্য লেখার অপেক্ষায় রোহিতরা।
Leave a Reply